আপডেটের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
সাংবাদিকতায় একুশে পদক পাচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। গতকাল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এম এ মালেক সহ ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক প্রদানের কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গৌতম বুদ্ধ দাশ শিক্ষায় এবং নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ড. সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের সমাজসেবায় এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর একুশে পদকের জন্য মনোনীত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ‘ভাষা আন্দোলন’ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মোস্তফা এম এ মতিন (মরণোত্তর) ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (মরণোত্তর)। ‘শিল্পকলা’য় পদক পাচ্ছেন জিনাত বরকতউল্লাহ (নৃত্য), সংগীতে নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ, মাহমুদুর রহমান বেণু, অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (খালেদ খান) (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ এ বি এম রহমান ও আমজাদ আলী খন্দকার।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন একুশে পদক পাচ্ছেন। সমাজসেবায় একুশে পদক পাচ্ছেন এস এম আব্রাহাম লিংকন। কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ ‘ভাষা ও সাহিত্য’ ক্ষেত্রে পদক পাচ্ছেন। এছাড়া গবেষণায় ড. মো. আবদুস সাত্তার মন্ডল এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবিষ্কারের জন্য দলগতভাবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. এনামুল হক (দলনেতা), ড. সাহানাজ সুলতানা ও ড. জান্নাতুল ফেরদৌস একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয়। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকতায় একুশে পদকের জন্য মনোনীত এম এ মালেক এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার এবং মরহুমা মালেকা খাতুনের একমাত্র পুত্র। ১৯৪০ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ কোহিনুর মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস স্কুল এবং চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়ন করেন। দৈনিক আজাদী প্রকাশের মাত্র দুই বছর পর ১৯৬২ সালে পিতার মৃত্যু হলে দৈনিক আজাদী প্রকাশনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। তখন থেকেই কখনো সম্পাদক আবার কখনো পরিচালনা সম্পাদক হিসেবে নিরবচ্ছিন্নভাবে দৈনিক আজাদী প্রকাশ করে আসছেন এম এ মালেক। বর্তমানে তিনি দেশের প্রবীণতম সম্পাদক। টানা ৬২ বছর তিনি দৈনিক আজাদীর প্রকাশনার সাথে জড়িত। পত্রিকার সাবেক সম্পাদক, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা পদকে ভূষিত রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মৃত্যুর পর ২০০৩ সাল থেকে আজাদীর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এম এ মালেক। এর আগে মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো সময় তিনি আজাদী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে জনমত সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে প্রকাশ হয়েছিল দৈনিক আজাদী। জয় বাংলা-বাংলার জয় ব্যানার শিরোনামে প্রকাশিত ওই পত্রিকার সম্পাদকও তিনি।
শুধু পত্রিকা প্রকাশনা বা সম্পাদনাই নয়, একজন প্রখ্যাত সমাজসেবক হিসেবেও চট্টগ্রামে ভিন্ন উচ্চতায় রয়েছেন এম এ মালেক। এম এ মালেকের বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁর সহধর্মিনী মিসেস কামরুন মালেক। তিনি নিজেও লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর গভর্নর এবং চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁরা দুই পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক-জননী।
লায়নিজমের সেবার মন্ত্রে বিশ্বাসী লায়ন এম এ মালেক লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রাক্তন গভর্নর, চট্টগ্রাম চক্ষু ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেঙ (সিআইইটিসি) এর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য ব্লাইন্ড (বিএনএসবি) এর ট্রাস্ট্রি মেম্বার, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রাক্তন পরিচালক, চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম সিনিয়রস ক্লাব লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক বোর্ড মেম্বার, চট্টগ্রাম কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান ও লাইফ মেম্বার, বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতির (নোয়াব) নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বোর্ড সদস্য, পূর্বাঞ্চলীয় সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান এবং লাইফ মেম্বার, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভাটিয়ারি গল্ফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব লিমিটেডের সদস্য, চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের লাইফ মেম্বার, চিটাগাং কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি, চিটাগাং কলেজিয়েটস স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতিসহ চট্টগ্রামের অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তিনি পিতা মরহুম আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়টি ফ্যাকাল্টিতে দশটি মেধাবৃত্তি প্রদান করছেন গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সকল অন্ধ ছাত্র-ছাত্রীর প্রত্যেককেই তিনি মাসিক ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
গত সাত বছর ধরে তিনি সাংবাদিকদের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে বিশেষ সম্মাননা পেয়ে আসছেন। জীবনব্যাপী পরিচালিত সামাজিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবায় বিপ্লব সাধন করা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
শুধু সাংবাদিকতাই নয়, চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবা, অন্ধত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন এবং শিক্ষার প্রসারে অনন্য ভূমিকা রেখে এম এ মালেক দিনে দিনে চট্টগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন।