খেলাঘর সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান পান্না কায়সারের শোকসভা অনুষ্ঠিত

পান্না কায়সারের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নেয়ার শপথ

এখন চট্টগ্রাম ডেস্ক।

আপডেটের সময়ঃ ডিসেম্বর ৫, ২০২৩

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির উদ্যোগে খেলাঘর সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপক পান্না কায়সার এর শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ প্রাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাতিঘর, শিক্ষাবিদ, লেখক গবেষক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শিশু কিশোরদের আলোকিত মানুষ, খেলাঘর সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান ও শহীদ জায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার এর শোকসভা আয়োজন করা হয়।

 

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না।

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম।

 

বক্তব্য রাখেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদুল আলম চৌধুরী, খেলাঘর সংগঠক এম নাসিরুল হক, সাংবাদিক সুভাষ দে, কবি আশীষ সেন, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া, শিল্পী শ্রেয়সী রায় ও আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান।

 

অনুষ্ঠান শুরু হয় অধ্যাপক পান্না কায়সারের প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে। উপস্থিত খেলাঘর নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন আসরের খেলাঘরের ভাইবোনেরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি আবার বাংলাদেশের বুকে ছোবল দিতে চাইছে। অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে জাগ্রত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। কারণ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হোঁচট খাচ্ছে। এ থেকে বাঁচতে হলে আগামীর সৈনিক চাই। নতুন প্রজন্মই সত্যিকারের যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক মানুষ হবে। এজন্য শিক্ষা ও শান্তি যেন শিশুদের জীবনের প্রতিপাদ্য হয়।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না বলেন, আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। সংবিধানে অনেক কাটাছেঁড়া আমাদের দেখতে হয়েছে। এখন এসব নিয়ে কথা বলাও প্রায় অসম্ভব। মৌলবাদীরা আমাদের সমাজকে আক্রমণ করেছে। ৫২ সাল থেকে আমাদের যে আন্দোলন তা কি আমরা মৌলবাদীদের হাতে যেতে দেব? কক্ষনো না। যুক্তিবাদী সমাজ গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানবিক মনোভাব গড়তে হবে। এর বড় অভাব সমাজে দেখতে পাই। আজ বড় কষ্ট লাগে। কোথায় নিয়ে গেলাম আমরা বাংলাদেশকে। আজ আমরা আরেক মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখীন। তাই শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম প্রোথিত করতে হবে। তাদের মধ্যে থেকে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

 

ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না বলেন, অধ্যাপক পান্না কায়সার প্রগতিশীল বাংলাদেশ বির্নিমানে, শিশুদের গড়ে তোলায় এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনে ‍ভূমিকা রেখেছেন। আজ আমাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব কতটা আছে সমাজে। সাংস্কৃতিক জাগরণ হয়েছিল বলেই মুক্তিযু্দ্ধের আগে রাজনৈতিক জাগরণ হয়েছিল। পান্না কায়সারের স্মৃতির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে তিনি যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

 

সভাপতির বক্তব্যে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত দু:সময় আমরা আজ পার করছি। শিশুরা আজ সহিংসতার শিকার। নৃশংস পরিবেশে সমাজে বসবাস করছি। শিশু ভালো না থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে না। বিশ্ব ভালো থাকবে না। এমন সময়ে অধ্যাপক পান্না কায়সার আমাদের মাঝে নেই। তিনি যে নীল পতাকা আমাদের দিয়ে গেছেন সেই পতাকা সাহসের সাথে সামনে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আজ আমরা বিভেদ চাই না। ঐক্য চাই। যদি খেলাঘরে কোনো ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলন হয় তাকে চট্টগ্রাম থেকে স্বাগত জানাই। আমাদের পদ-পদবির দরকার নেই। শিশুরা যদি একসাথে হাসতে পারে, একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বির্নিমানে যদি কোনো শুভ কাজ হয় তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

 

বক্তারা বলেন, অধ্যাপক পান্না কায়সার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে সারাজীবন লড়াই করে গেছেন। সকল জাতি ধর্ম বর্ণের মানুষের জন্য এই বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছিল। লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি লাখো শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। #