ছয় বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ছায়ানটের স্মরণ


এখন চট্টগ্রাম ডেস্ক।

আপডেটের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২

করোনাকালে মারা যাওয়া দেশের ছয় বিশিষ্ট জনকে স্মরণ করেছে ছায়ানট। এ নিয়ে গতকাল শনিবার রাতে একটি সমন্বিত তথ্যচিত্র প্রকাশ করে ছায়ানট। এই স্মরণ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়েছিলেন।

বিশিষ্ট এই ছয় ব্যক্তি হলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, স্থপতি বশিরুল হক, অভিনেতা ও নাট্যজন আলী যাকের, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী এবং অধ্যাপক গালিব আহসান খান।

স্মরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন-কর্ম যোগ করার পাশাপাশি তাঁদের নিয়ে অনেকের মূল্যায়ন ও স্মৃতিচারণ তুলে দেওয়া হয়।

স্মরণ অনুষ্ঠান নিয়ে করা সমন্বিত ওই তথ্যচিত্রে প্রথমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় স্থপতি বশিরুল হককে। তাঁর সম্বন্ধে স্থপতি নাহাস খলিল বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের স্থাপত্য বিদ্যা যে জায়গা করে নিয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। আর তা সম্ভব হয়েছে বশিরুল হকদের মতো কিছু ‘সেনসিটিভ’ মানুষের জন্য।

তথ্যচিত্রে দুই নম্বরে তুলে ধরা হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর জীবন-কর্ম। মুক্তিযুদ্ধকালে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর ঈর্শনীয় ভূমিকা তুলে ধরা হয় প্রামাণ্য চিত্র আকারে। তাঁর সম্পর্কে ডা. সারওয়ার আলী বলেন, তৎকালীন পাবনার সিরাজগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি মাত্র ছয় বছর বয়সে মাকে হারান। এর পর তাঁকে কলকাতায় পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেন। এতে তাঁর মনে যে রেখাপাত করেছে তার মধ্যে দিয়ে কামাল লোহানী হয়ে উঠেছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষ হিসেবে।

তথ্যচিত্রে তিন নম্বরে তুলে ধরা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর কথা । তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি তারিক আলী ও প্রয়াত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে থাকার কথা উল্লেখ করেন। সেখানে দেশের সংস্কৃতি নিয়ে তারিক আলির প্রচেষ্টার প্রসঙ্গে টেনে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তাঁর মতো বাঙালি আমি আমার জীবনে আর দেখি নাই।’

তথ্যচিত্রে চার নম্বরে তুলে ধরে হয় অভিনেতা ও নাট্যজন আলী যাকেরের জীবন-কর্ম। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন অভিনেতা ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। ‘আলী জাকের, আমাদের ছটলু ভাই, আমাদের সকলের অনেক প্রিয় একজন মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি একজন বিশাল ব্যক্তিত্ব। তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। আমার নাটকের যে জীবন, জীবিকা অর্জনের যে জীবন— এই দুটো ক্ষেত্রেই ছটলু ভাইয়ের অবধান সবচেয়ে বেশি।’ অনেক কথার সঙ্গে অনেকটা স্মৃতিকাতর হয়ে এসব কথাগুলো বলেন আসাদুজ্জামান নূর।

তথ্যচিত্রে পাঁচ নম্বরে তুলে ধরা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক গালিব আহসান খানের কথা। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন লেখক ও অনুবাদক ফখরুল আলম এবং লিয়াকত আলী খান। ফখরুল আলম বলেন, তিনি কম কথা বলতেন। তিনি কথার অপচয় করতেন না। লিয়াকত আলী বলেন, ‘গালিব আহসানকে ছায়ানটের ভাষার আলাপে পেয়েছি। তিনি পণ্ডিত মানুষ ছিলেন। তিনি পশ্চিমা, গ্রিক, ভারতীয় দর্শন —প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি খুব স্বল্প ভাষী ছিলেন, নরম সুরে কথা বলতেন। কিন্তু তাঁর কথার বীজ আমাদের অন্তরে বপন হয়ে যেত।’

তথ্যচিত্রে সর্বশেষ তুলে ধরা হয়, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের জীবন-কর্ম। তাঁকে নিয়ে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও প্রকাশক মফিদুল হক। মফিদুল হক বলেন, শামসুজ্জামান খান ছয় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের যে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, সম্পৃক্ত ছিলেন। কেবল সম্পৃক্ত বললে কম বলা হয়। তিনি এখানে নিষ্ঠার তাঁর ভূমিকা পালন করেছেন। একপর্যায়ে যখন পর্যায়ক্রমে তিনটি প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে এলেন তখন তিনি নানা ভাবে তাঁর কর্মধারার মধ্য দিয়ে ভূমিকা পালন করেন। পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধে-সংগ্রামে সব সময় সম্পৃক্ত ছিলেন।

স্মরণ অনুষ্ঠানে লাইসা আহমেদ লিসার পাশাপাশি সংগীত পরিবেশন করেন, শিল্পী চন্দনা মজুমদার, মহিউজ্জামান চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ। দেড় ঘণ্টার এই সমন্বিত তথ্যচিত্রটি দেখা যাচ্ছে ইউটিউব চ্যানেল ‘Chhayanaut Digital-Platform’ এ।