জয়নব, একজন নারী মিলিশিয়া


এখন চট্টগ্রাম ডেস্ক।

আপডেটের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২

জয়নব সেরেকানিয়া, তাঁর ফাঁকা দাঁতগুলো বের করে হেসে হেসে বলছিল, সে কখনোই ভাবেনি মিলিশিয়ায় যোগ দেবে।
উত্তর পূর্ব সিরিয়ার রাসালান শহরে বেড়ে উঠা ২৬ বছর বয়সী জয়নব তার পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র নারী। সে পুরুষের পোশাকে যুদ্ধ করতে পছন্দই করে। কিন্তু যখন তার ভাইয়েরা পড়াশোনা করার অনুমতি পায় আর তাকে অনুমতি দেয়া হয় না সেটা সে বিনা প্রতিবাদেই মেনে নিয়েছিল। সে জানতো সেটাই তার সমাজে প্রচলিত। আরবি শব্দ রাসালান-এর অর্থ বসন্তের শুরু, সবুজ, সজীব আর ভেজা ভেজা পিচ্ছিল এক জনপদ। সেরেকানিয়া তাই মায়ের সাথে সব্জির খামার করারই সিদ্ধান্ত নেয়।

সবকিছু পালটে যায় ২০১৯- এর ৯ অক্টোবর, তদানিন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তরপূর্ব সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে। মার্কিন সৈন্যরা কুর্দি সৈন্যদের সাথে সেখানে বেশকিছু বছর ধরে যুক্ত বাহিনী হিসেবে কাজ করছিল। তুরস্কের নতুন সরকার রাষ্ট্রবিহীন কুর্দিদের একটা হুমকি মনে করছিল। তাদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে আসছিল বেশ কয়েক দশক ধরেই। ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে কুর্দি সৈন্যরা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় বিশেষ করে রাসলান সহ উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকায় হঠাৎ করেই চরমপন্থা অবলম্বন করে।
‘সেদিন বিকাল ৪টা নাগাদ বোমাবর্ষণ শুরু হয়, গোলাপি ধোয়া আর মর্টার শেলের দলাগুলো চারদিকে ঘোলাটে করে দেয়। ’ সেরেকানিয়া এভাবেই সেদিনের বর্ণনা দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ পরিবার নিয়ে সেরেকানিয়া মরুভূমির দিকে পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই তারা তাদের শহরকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে দেখে। পালানোর সময় কিছুই সাথে নিতে পারেনি সেরেকানিয়ার পরিবার।
‘আমাদের ছোট গাড়িটাতে মানুষেরই জায়গা হচ্ছিল না, জিনিসপত্র কীভাবে নেবো?’

পালানোর পথে রাস্তার উপর অনেকের মৃতদেহ প্রত্যক্ষ করেছে তারা। তারমধ্যে তার এক চাচা এবং তার পরিবারও ছিল।
জয়নব সেরেকানিয়ার পরিবার আরো দক্ষিণে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। জয়নব তার মা’কে অবাক করে দিয়ে মহিলা মিলিশিয়া দলে নাম লেখায়। পুরোপুরি নারী মিলিশিয়া দ্বারা পরিচালিত ইয়াইপিজি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়াইপিজি মূলত নারী প্রতিরক্ষা ইউনিট যা এর পুরুষ প্রতিপক্ষ ইউনিট প্রতিষ্ঠার পরপরই গঠন করা হয়। এই সংগঠনগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন গ্রুপের কবল থেকে নিজের এলাকাকে রক্ষা করা, এমনকী পরবর্তীতে আই এস এর বিরুদ্ধেও। ইয়াইজিপি মানবাধিকার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত বিশেষ করে শিশু যোদ্ধাদের ব্যবহার করার কারণে।
জয়নব সেরেকানিয়ার মা জয়নবের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কারণ তার দুই ভাই ইতোমধ্যে তাদের জীবন বিপন্ন করে এতে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু জয়নব তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তার কথা হলো,‘আমরা আমাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছি। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো একে উদ্ধার করা। আগে আমি এভাবে ভাবিনি কিন্তু এখন আমার একটা উদ্দেশ্য আছে, আছে লক্ষ্য।’

বিগত দুই বছরে প্রায় ১০০০ সিরিয় নারীর মধ্যে জয়নব সেরেকানিয়া একজন যিনি মিলিশিয়ায় নাম লিখিয়েছেন। অনেকে তুরস্কের আধিপত্যবাদ আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড রাগ থেকে এ-খাতায় নাম লেখালেও পরবর্তীতে নিজস্ব গন্তব্যে ফিরে যায়। জয়নব সেরেকানিয়া দৃপ্ত কন্ঠে বলেন . . .
‘যে কোনও আলোচনায় বা কোনও এক বিষয়ে পুরুষেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টা শেষ করে দেয়, নারী মতামতের কোনও স্থান থাকে না। এখন আমরা নারীরা সিদ্ধান্ত নিই এবং আমরা নিজেরাই যুদ্ধ করে আমাদের জন্মভূমি রক্ষায় ভূমিকা রাখি।’