তাড়াশে জমজমাট আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা

সূত্রঃ প্রথম আলো

এখন চট্টগ্রাম ডেস্ক।

আপডেটের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২

মাঘের হাড় কাঁপানো শীত আর অসময়ের বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যের স্মারক জমজমাট দই মেলা। আজ শনিবার বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী এ মেলা ঘিরে উপজেলা সদরের তাড়াশ মাঠে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। প্রায় আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলায় লোকজনের পদচারণে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। করোনা সংক্রমণের ভয় এড়িয়ে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও উৎসুক জনতা মেলায় ভিড় জমান।

গত রাতেও বৃষ্টি ঝরেছে। সবার মনেই ভাবনা ছিল মেলার দিনে কী হবে। কিন্তু সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলায় আর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তবে আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। মাঝে কয়েকবার সূর্য উঁকি দিলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফলে মেলায় বিভিন্ন স্বাদের দই কেনার পাশাপাশি মুড়ি-মুড়কি, চিড়া, বাতাসা, কদমাসহ রসনাবিলাসী নানা ধরনের খাবারও বিক্রি হচ্ছে। নানা ধর্মের বিভিন্ন বয়সী মানুষ এসব খাবার কিনতে মেলায় এসেছেন।

তাড়াশ সদরের গোপীনাথ সরকার স্ত্রী আর ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সরস্বতী পূজা ঘিরে এ মেলার কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে দাদা ও বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছি। আজ আমার সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ে এসেছে।’ ঐতিহ্যের এ ধারা বেঁচে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ষাটোর্ধ্ব কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উপলক্ষে এ মেলা হলেও দই কিনতে আসেন সবাই। প্রতিবারের মতো এবারও পরিবারের জন্য দই কিনতে এসেছেন তিনি। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শামীম হোসেন। তিনিও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দই মেলায়। ছেলের পছন্দের দই কিনবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঐতিহ্যের এ মেলায় সুযোগ পেলেই আসি।’

রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু রায়হান দই মেলায় এসেছেন প্রথমবার। তিনি বলেন, ‘অনেক গল্প শুনেছি, তাই আজ দই ও বিভিন্ন খাবার কিনতে মেলায় এসেছি।’ দুজন নারী ক্রেতা বলেন, দই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষ সম্প্রীতির নতুন সম্পর্ক তৈরি করে।

৮০ বছর বয়সী দই তৈরিকারক নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার তানু কাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও মেলায় দই বিক্রি করতে এসেছি।’ একসময় দাদা ও বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমার সঙ্গে দই বিক্রি করতে নাতিরা আসে।’ নাতি রাজু আহমেদ কাজী জানায়, ‘সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করি। মাঝে মাঝে দাদার সঙ্গে দই তৈরির কাজ করি।’ করোনা ও বৃষ্টির কারণে দই বিক্রি আগের চেয়ে কিছুটা কম বলে জানান তিনজন বিক্রেতা। তবু প্রাণের টানে প্রতিবছরই তাঁরা দই মেলায় আসেন বলে জানান।

চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশের দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমিদারি আমলে তাড়াশের সেই সময়ের জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন হয়।