আপডেটের সময়ঃ মে ২৭, ২০২৩
সমাজবিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সমাজ অধ্যায়ন কেন্দ্রের সভাপতি ড. অনুপম সেন বলেন, নাসিমুল গণিকে নব্বই দশক থেকে চিনি। তাকে ভোলা যায় না। মাঝে অনেকদিন তার সাথে যোগাযোগ ছিল না। আবার যোগাযোগ হয়েছে। অনেক কাজ নাসিমুল গণি করেছে। আবার করতে চেয়েছে। ৩০ বছর আগে একক উদ্যোগে বইমেলা করতে গিয়ে তিনি অনেক অর্থ খরচ করে ফেলেছিলেন৷ নিজের সব উজাড় করে দিয়ে কিসে মানুষের কল্যাণ হয় তাই উনার চিন্তা ছিল। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণ চিন্তা অসুস্থ অবস্থায়ও নাসিমুল গণির মধ্যে ছিল। এ ধরণের মানুষ সমাজে দুলর্ভ। নিজের অর্থ খরচ করে নানা উদ্যোগ নিতেন। অনেকে বলেছেন তার রাশ টেনে না ধরলে নিজেকে নি:স্ব করে ফেলবেন। এমন মানুষ পাওয়া যায় না। খুবই ভালো সংগঠক নাসিমুল গণি। তিনি অন্যদের মত নন। সমাজ জীবনের গড়পড়তা ধারার উপরে ছিলেন। সারাক্ষণ ভাবছেন মানুষের জন্য কী করা যায়। তিনি নিজের জীবন দিয়ে উদাহরণ রেখে গেছেন। নিজের সময়কে জয় করে তিনি চলে গেছেন। নাসিমুল গণি সেরকম এক মানুষ যাকে অনেকদিন পরও মানুষ মনে রাখবে৷ সকলের মনে তিনি আসন গেড়েছেন। আমাদের মনে বহু বহুদিন তিনি বেঁচে থাকবেন।
সমাজ অধ্যায়ন কেন্দ্রের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনের অনন্য সংগঠক নাসিমুল গণির অকাল প্রয়ানে সমাজ অধ্যয়ন কেন্দ্র আয়োজিত স্মরণ সভা চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার সন্ধ্যায়।
১৪ দল চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নাসিমুল গণি হঠাৎ চলে গেছেন। তার সহযাত্রীরা সকলেই আছেন। তিনি যে রাজনৈতিক সংগঠন করতেন তার সাথে আমি যুক্ত ছিলাম না। কর্ণফুলী সাহিত্য আসরে নাসিমুল গণির সাথে দেখা হত ৭৫ পরবর্তী সময়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ভালো কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থাকে। এই চেতনা থেকেই নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ি। মধ্যবিত্ত সমাজের তারুণ্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের রাজনৈতিক দার্শনিকরা সঠিক পথ দেখাতে সফল হননি। আমাদের বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তাই বারবার ভেঙেছে নানা প্রশ্নে। মানুষে মানুষে ভালোবাসার অমোঘ বন্ধন আমাদের দেশে আছে। সমাজকে রাষ্ট্রকে এ তরুণরা কিছু দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নেতাদের কারণে তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারল না। এই আক্ষেপ রয়েই গেল। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে স্বাধীনতার চেতনাকে রক্ষা করতে হবে। কোন দল ভালো কোন দল খারাপ সেটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো দেশকে এগিয়ে নেয়া। সমাজে মুক্ত আলোর জন্য সব দরজা খুলতে হবে। মুক্ত আলোচনা করতে হবে। কারণ হাজার মানুষ ভালো চিন্তা করে। নাসিমুল গণির সেই ভাবনাকেই এগিয়ে নিতে হবে।
গবেষক শরীফ শমশির বলেন, জীবিতকালে নাসিমুল গণি সকলের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। আজো তিনি আমাদের সাথে সম্পর্কিত। নাসিমুল গণি একজন সমাজ দরদী, চট্টগ্রামকে খুব ভালোবাসত, প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখত। এক জীবনে সব কাজ শেষ করা যায় না। তিনি জীবনের চেয়েও বড় স্মৃতি তৈরি করে গেছেন। রাজনীতি ও সমাজ মনস্ক নাসিমুল গণির ছিল বর্ণাঢ্য জীবন। স্কুল জীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত ছিল। জানত সকল সংকট দূর করতে হলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রয়োজন। ভবিষ্যত প্রজন্মও সেটা অনুভব করব। সেদিন নাসিমুল গণির প্রচেষ্টার গুরুত্ব অনুধাবিত হবে।
স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু হানিফ, জাসদ নেতা মো. সোলায়মান খান, অ্যাডভোকেট মজিবুল হক, দেওয়ান মাকসুদ,জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, নাসিমুল হক নবাব, সুজাউদ্দিন জাফর, কাজী এ এম এমমমতাজুল ইসলাম, কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান, ইউসুফ মোহাম্মদ, সাইফুদ্দিন সাকী, ডা. দেবাশীষ চৌধুরী, নুরুল আবছার চৌধুরী আশু, অধ্যাপিকা নারগিস আক্তার, নাসিমুল গণির ছেলে ফাহিম শাহরিয়ার আকাশ।
স্মরণ সভায় নাসিমুল গণির জীবনী পাঠ করেন জামাল নাসের চৌধুরী, শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মনসুর মাসুদ।
স্মরণ সভা পরিচালনা করেন শরীফ চৌহান।