আপডেটের সময়ঃ জুন ১৮, ২০২২
চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় ধ্বসে ঘটনায় ৪ জন নিহতের ঘটনার দায় কোনোভাবে প্রশাসন এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান।
চট্টগ্রামের পাহাড় ধ্বসে ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৯জন। ১৭ জুন (শুক্রবার) গভীর রাতে বন্দর নগরীর আকবর শাহ থানার ১ নম্বর ঝিল এবং ফয়’স লেক সংলগ্ন বিজয় নগর এলাকায় পাহাড় ধ্বসে পড়ে। ১ নম্বর ঝিল এলাকায় পাহাড় ধ্বসে একই পরিবারের দুই বোন নিহত হয়। আহত হয় তাদের মা-বাবা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় নিহত দুই বোনের দুই শিশু। বিজয় নগরে পাহাড় ধ্বসে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিবৃতিতে পিপল’স ভয়েস সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, চট্টগ্রামে গত রাতের এই প্রাণহানী প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতার কারণে হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা আসার আগে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু দাপ্তরিক কর্মকান্ড দেখা যায়। যেমন- সভা করা ও কমিটি গঠন। যথারীতি এ বছরও মাস খানেক আগে কয়েকটি সভা হয়েছে। একাধিক কমিটিও হয়েছে। কিন্তু বর্ষায় ভারি বর্ষণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে বা উচ্ছেদে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শুধু তালিকা প্রণয়ন ও সুপারিশ গ্রহণে কমিটি কাজ সেরেছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই ভারি বর্ষণে পাহাড় ধরে এই প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। এর দায় কোনোভাবে প্রশাসন এড়াতে পারে না।
প্রতি বছরের মত গত ১১ জুন, ২০০৭ সালে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা স্মরণে পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে পিপল’স ভয়েস। সেদিন পিপল’স ভয়েসের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধে টাস্কফোর্স এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হয়েছিল।
সমাবেশ থেকে যে ৫টি দাবি উত্থাপন করা হয় সেগুলো হলো- ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা, ২০০৭ সালে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়, টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ সুরক্ষা করে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি শরীফ চৌহান এসব দাবি উত্থাপন করেন। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় ও নদী রক্ষায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন।
২০০৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগর এবং ২০১৭ সালে রাঙমাটি ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধ্বসে নিহতদের স্মরণে এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিপলস ভয়েস’ ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধ্বসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
শুক্রবার গভীর রাতে পাহাড় ধ্বসের এই ঘটনায় প্রাণহানীর প্রেক্ষিতে পিপল’স ভয়েস অবিলম্বে- নগরীতে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা সকল বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া, পাহাড় কেটে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অবৈধ স্থাপনায় সরকারি সেবা সংস্থার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, টাস্কফোর্স গঠন করে পাহাড় দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা ও বিচার শুরু, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার জন্য দোষীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সমস্যা সমাধানে দ্রুত নির্দেশনা দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধ্বসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন নিহত হয়েছিল। আজ পর্যন্ত পাহাড় কাটা থামেনি। এরপর প্রায় প্রতি বছর নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে আরও কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পিপল’স ভয়েস বলতে চায়, এসব ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়। পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানি বন্ধে অবিলম্বে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছে পিপল’স ভয়েস।