আপডেটের সময়ঃ জুলাই ৮, ২০২২
একাত্তরে দুনিয়া কাঁপানো নৌ অপারেশন এমটি অ্যাভলুজসহ অনেক সফল নৌযুদ্ধের নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা, নৌকমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী আর নেই। ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাইদচকিয়া গ্রামের মহব্বত আলী মুন্সী বাড়িস্থ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা রেখে যান।
শুক্রবার বাদ আছর মরহুমের নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে গ্রিসের পতাকাবাহী তেলভর্তি জাহাজ এমটি অ্যাভলুজ ধ্বংসের পর পাক হানাদার সরকার আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক জবাবদিহিতার মুখে পড়ে। বহির্বিশ্বে প্রচার হয়, পাকবাহিনী বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে এটিসহ ছয়টি সফল নৌ অপারেশন করেন। অ্যাভলুজ তাঁর তৃতীয় অপারেশন। প্রথম অপারেশন ১৪ আগস্টের অপারেশন জ্যাকপট, দ্বিতীয় অপারেশন আউটার অ্যাঙ্কর। অ্যাভলুজের পর বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী মোহনায় এমভি তুরাগ ধ্বংস, নারায়ণগঞ্জ বিশ্ব গোডাউনের সামনে জাতিসংঘের রসদবাহী জাহাজ মিনি লেডি ও মিনি লায়ন ধ্বংস এবং কাঁচপুর ফেরি ও পন্টুন উড়িয়ে দেওয়ার অভিযানে ছিলেন অন্যতম বীর। এসব নৌ অপারেশন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
অ্যাভলুজ ধ্বংসের সময় তাঁর মাথায় সৃষ্ট ক্ষত যুদ্ধের দুই দশক পর কঠিন ব্যাধিতে রূপ নেয়। দেশের চিকিৎসায় সেরে না ওঠায় ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৮ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থেকে চিকিৎসা নেন। মাঝে দেশে ফেরার পর আবার রোগ দেখা দিলে ২০০৫ সালে চিকিৎসার জন্য ফিরে যান আমেরিকায়। একাত্তরের ক্ষত আমৃত্যু বয়ে বেড়িয়েছেন । ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ যোগাতে জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও বিদেশে চাকরি করতে হয়েছিল তাকে ।
নৌ কমান্ডো হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় আবু মুসা ছিলেন দশম শ্রেণীর ছাত্র। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার হাইদচকিয়ার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী মরহুম সুলতান আহমদ চৌধুরী ও নফিজা খাতুনের কনিষ্ঠ পুত্র তিনি।
প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্নে মহসিন কাজী জানান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখে খেতাব না পেলেও আবু মুসা চৌধুরীর ক্ষোভ ছিলোনা। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাই তাঁর জন্য পরম পাওয়া। তাঁর একমাত্র চাওয়া ছিল , যে লক্ষ্যে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন। প্রজন্মের জন্য সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ।#