যেসব কারণে পিছিয়ে পড়েছে অক্সফোর্ডের টিকা

সূত্রঃ প্রথম আলো।

এখন চট্টগ্রাম ডেস্ক।

আপডেটের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২

করোনা মহামারি রোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সুনাম নষ্ট করে বিজ্ঞানী ও রাজনীতিকেরা হাজারো মানুষকে হত্যা করেছেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন টিকা নিয়ে কাজ করা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জন বেল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানী জন বেল বলেন, ‘তারা এ টিকার সুনাম এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। আমি মনে করি, বিজ্ঞানী ও রাজনীতিকদের বাজে আচরণ সম্ভবত হাজারো মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর এটি নিয়ে তাঁদের গর্ব করার কিছু নেই।’

রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টির কারণে ৪০ বছরের কম বয়সীদের ওপর টিকার অনুমোদন দেয় দেশটির সরকার। অন্যদিকে রক্ত জমাট বাঁধার ভয়ে ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশে স্থগিত করা হয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা প্রয়োগ। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, নেদার‌ল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, আইসল্যান্ড ও থাইল্যান্ড।

অক্সফোর্ডের টিকার উদ্ভাবন সে সময় যুক্তরাজ্যের একটি সাফল্যের নজির হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটি বিশ্ববাসীর জন্য যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে একটি উপহার। কিন্তু খোদ যুক্তরাজ্যের বুস্টার কার্যক্রমেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটিতে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হলেও এর মধ্যে মাত্র ৪৮ হাজার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহৃত হয়েছে বুস্টার ডোজ হিসেবে।

অথচ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছিল যেন এটি সস্তায় পাওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় এই টিকার বাজারজাত করাও সহজ হবে বলে মনে করা হয়েছিল। এ ছাড়া অন্যান্য টিকার (এমআরএনএ) তুলনায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পরিবহন ও সংরক্ষণ হবে সহজতর। বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এই টিকার প্রয়োগ হবে সহজতর। অবশ্য যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ অ্যাস্ট্রোজেনেকার দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার অনুমোদন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা কাকতালীয়ভাবে একই সময়ে হয়েছে। জন বেল বলেন, ‘এই টিকাকে ব্রিটিশ টিকা হিসেবে প্রচার করায় এটি ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক সহজ করতে প্রভাব ফেলেছে বলে আমি মনে করি না।’

গত বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে ইইউ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেয়। কিন্তু ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা টিকার পূর্ণ অনুমোদন দেওয়ার আগেই জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেবে না। একই পথে হাঁটে ইউরোপের আরেকটি প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্সও। কিন্তু এরই মধ্যে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি সব বয়সী প্রাপ্তবয়স্কের জন্য এই টিকার অনুমোদন দেয়। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত বদলায় জার্মানি ও ফ্রান্স। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।

উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়েও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। টিকার উৎপাদন যুক্তরাজ্য ও ইইউতে হলেও চুক্তি অনুযায়ী টিকা প্রাপ্তিতে যুক্তরাজ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছিল। ফলে সে সময়ের চাহিদামাফিক অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের যুক্তরাজ্যের প্ল্যান্টে উৎপাদিত টিকা ইইউতে পাঠাতে পারছিল না।

মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কথা উঠলেও সেটি ছিল সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি ৬৫ হাজারে ১ জনের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে। এরপর যখন ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষণা করে, এই টিকায় সার্বিক সুরক্ষা পাওয়া যায়। তখন ইউরোপের অনেক দেশ টিকা প্রয়োগের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। কিন্তু টিকা ব্যবহারের জন্য বয়স বেঁধে দেয় তারা।

এরপর করোনার নতুন নতুন ধরন রোধে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বুস্টার ডোজ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী চালু হওয়া বুস্টার ডোজ প্রয়োগে এগিয়ে রাখা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ফাইজার-বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকাকে। অপরদিকে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রয়োগ মুখ থুবড়ে পড়ে।

যুক্তরাজ্যে বুস্টার ডোজ হিসেবে অনুমোদন রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরিবর্তে মডার্না ও ফাইজারের টিকাই নিচ্ছে। অনেকে আবার এর পেছনে যুক্তি হিসেবে টিকার মিশ্র ডোজ নিলে অধিক সুরক্ষা পাওয়ার কথাও বলছেন।