আপডেটের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
একসময় গ্রাম ও চরাঞ্চলের মাঠজুড়ে কেবল ধান চাষ করা হতো। এখন সেই মাঠজুড়ে শুধু চোখে পড়ে টমেটোর খেত। গ্রামের পর গ্রাম মাঠজুড়ে শুধু টমেটো আর টমেটো। আর এতে ভাগ্য বদলে গেছে বহু কৃষকের। তেমনই একজন মো. শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম একসময় জমিতে ধান ও পাট চাষ করে তেমন সাফল্য পাননি। কোনোরকমে চলত সংসার। ১০ বছর ধরে ধানের পাশাপাশি তিন বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে তাঁর ভাগ্য বদলে গেছে। তাঁর মতো জামালপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামের ৬ হাজার কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে।
জামালপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের গ্রামগুলোতে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। বাজারে দামও মিলছে ভালো। ফলে কৃষকের মুখের হাসি আরও চওড়া হয়েছে। টমেটো চাষ করে ওইসব গ্রামের প্রায় ছয় হাজার কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের তথ্যানুসারে, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। তবে হিমাগার থাকলে আরও বেশি টাকায় টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হতো বলে জানান কৃষকেরা।
জামালপুরে টমেটোর সবচেয়ে বড় বাজার নান্দিনা। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নান্দিনা বাজারে বিশাল মাঠজুড়ে শুধু টমেটো আর টমেটো। শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক বিক্রির জন্য টমেটো স্তূপ করে রাখছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারেরা টমেটোর ট্রাক বোঝাই করতে ব্যস্ত। মৌসুমে নান্দিনা বাজার থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মণ টমেটো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। মৌসুমের প্রথম দিকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে টমেটো। শেষ দিকে তা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় নেমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে হিমাগারের কথা তোলেন চাষিরা। তাঁদের সঙ্গে জেলার কৃষি কর্মকর্তারাও এক মত পোষণ করেন। তাঁরা বলেন, সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় চাষিরা সব টমেটো একবারে বিক্রি করতে বাধ্য হন। অথচ পাইকারেরা তা হিমাগারে সংরক্ষণ করে অনেক মুনাফা করেন।
লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের চর যথার্থপুর গ্রামের টমেটো চাষি মো. শফিকুল ইসলাম নান্দিনা বাজারে টমেটো বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে এবার টমেটো চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। সবকিছু মিলে তাঁর প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তিনি টমেটো বিক্রি শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি তিন লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। তাঁর খেতে আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার টমেটো আছে। টমেটো চাষ করে তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
জামালপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার লক্ষ্মীরচর, তুলসীরচর, রানাগাছা, শরিফপুর ও নরুন্দি ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামের প্রায় ৬ হাজার কৃষক ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের চরগুলোতে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন।
জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াছমিন প্রথম আলোকে বলেন, সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ চরে টমেটো এখন টেকসই ফসল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। টমেটো চাষ করে কৃষকেরা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাঁদের চাষ করা টমেটো এখন প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্তে চলে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর থেকে টমেটো বিক্রি শুরু হয়েছে, চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় একজন চাষি খরচ বাদে এ বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুনাফা করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে টমেটো প্রক্রিয়াজাত কারখানা করেছে একটি বেসরকারি কোম্পানি। কিন্তু জামালপুরে এমন কিছু নেই। চাষিরা মনে করেন, জামালপুরে কারখানা থাকলে তাঁরা আরও লাভবান হতেন।