আপডেটের সময়ঃ এপ্রিল ২৫, ২০২২
মাথার উপরে তখন তপ্ত সূর্য আগুনের হলকা ছড়াচ্ছে যেন বাতাসে। আশেপাশে বাজছে যুদ্ধের দামামা। এমন আবহে ২৭ মিনিটের টান টান উত্তেজনা। সমানে সমান লড়াই। সবশেষে ২ বছরের অপেক্ষা পেরিয়ে আবার মাঠে গড়ানো আবদুল জব্বারের বলী খেলায় শিরোপা উঠলো জীবন বলীর হাতে।
২০১৮ সালে লালদীঘি মাঠে বলী খেলার মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলী। পরের বছর ২০১৯ সালে তাকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেন কুমিল্লার শাহজালাল। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে বসেনি বলী খেলার ১১১ ও ১১২ তম আসর। ১১৩ তম আসরে আবারো শিরোপা নিজের করে নিলেন জীবন। এই দুই বলীর দ্বৈরথ যেন ফিরিয়ে আনছে গত দশকের মর্ম সিং ত্রিপুরা আর দিদার বলীর দ্বৈরথের স্মৃতি।
এবার মাঠে বসেনি খেলা। শুরু থেকেই বলী খেলা আর মেলা আয়োজন নিয়ে ছিলো দোটানা। সব দ্বিধা ছাপিয়ে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী মেলা ও খেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। আর সোমবার শেষ বিকেলে লালদীঘি মাঠের পাশের চার রাস্তের মোড়ে বানানো অস্থায়ী মঞ্চ ঘিরে মানুষের সমাগম বলে দেয় জব্বারের বলী খেলা চট্টগ্রামবাসীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার কুস্তি প্রতিযোগিতা দেখতে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল মঞ্চ ঘিরে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ কে আসেনি বলী খেলা দেখতে? নানা বয়সী দর্শকের মত বলীরাও ছিলেন নানা বয়সের। শিশু থেকে ষাটোর্ধ বলী, সবাই ছিলেন বালি দিয়ে তৈরি যুদ্ধক্ষেত্রে। দেশের নানা প্রান্তের নানা পেশার মানুষ একই মঞ্চে সামিল হন শারীরিক কসরতের পরীক্ষায়। এ যেন এক সার্বজনীন উৎসব।
বলী খেলায় এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে অংশ নেন ৮ জন। তাদের মধ্যে জয়ী হন জীবন, শাহজালাল, খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা আর বাঁশখালীর মুবিন। এরপর সেমিফাইনালে মুবিনকে মাত্র ২ মিনিটে কুপোকাত করেন জীবন। আর খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা ৭ মিনিট লড়ে হার মানের শাহজালালের কাছে।
এরপর শুরু হয় কাঙ্ক্ষিত ফাইনাল। কী ছিল না ফাইনালে। খেলা শেষের বাঁশি বেজেছে। আবার খেলা হয়েছে। তাতেও ফল না আসায় আবার সময় দেয়া হয়েছে দুই ফাইনালিস্টকে। তারপরও জয়-পরাজয় সুরাহা না হওয়ায় হিসেব করতে হয়েছে পয়েন্ট ধরে।
শুরুতে প্রথম ১৯ মিনিট খেলা চলার পর প্রধান রেফারি আব্দুল মালেক ৩:০ পয়েন্টের ব্যবধানে জীবনকে জয়ী ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তখন শাহজালাল এর বিরোধিতা করেন। সমবেত দর্শকরা ফলাফল মেনে না নিয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়। তখন আয়োজকরা আরও ৫ মিনিট সময় দেন। এতেও জয় নিশ্চিত না হওয়ায় আয়োজকরা বিচারের ভার দেন প্রধান অতিথি ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিমের কাছে। সিটি মেয়র ওই সময় বিচারকদের সাথে আলোচনা করে আরও তিন মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন। ওই তিনি মিনিটেও কেউ যখন প্রতিপক্ষের পিঠ মাটিতে ছোঁয়াতে পারল না, রেফারি ৩:০ পয়েন্টের ব্যবধানে জীবন বলিকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন।
নতুন বিজয়ী জীবন যখন ট্রফি উঁচিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছেন তখন পশ্চিমাকাশে গোধূলির লালিমা ছড়িয়ে পড়েছে। তপ্ত সূর্য যেন সৌর্য হারিয়ে হীনবল। জয় হলো বলীর। জয় হলো বলী খেলার। সমবেত হাজার দর্শকের আনন্দ ধ্বনি ঘোষণা করলো চট্টগ্রাম তথা আপামর বাংলাদেশের ঐতিহ্যের বিজয় বার্তা।