সংস্কৃতি খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ডিসি হিল ও সিআরবি মুক্ত মঞ্চ উন্মুক্ত করার দাবি


এখন চট্টগ্রাম ডেস্ক।

আপডেটের সময়ঃ জুন ১৮, ২০২২

সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৮দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা নাগরিক সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রামের ডিসি হিল ও সিআরবি মুক্ত মঞ্চ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানানো হয়।

 

শনিবার বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসানের পরিচালনায় সমাবেশ থেকে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কমপক্ষে ১ শতাংশ করার দাবি জানান চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন ও শিল্পীরা।

 

নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী এবং পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী কল্পনা লালা, সঙ্গীত শিল্পী শ্রেয়সী রায়, সম্মিলিত আবৃত্তি জোট চট্টগ্রামের সভাপতি হাসান জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রুদ্র, খেলাঘর সংগঠক মোরশেদুল আলম, জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামের সদস্য নাট্য ও আবৃত্তি শিল্পী কংকন দাশ, সংগঠক মো. সাজ্জাত হোসেন, শব্দ নোঙর আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা খানম, কণ্ঠনীড় আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি সেলিম রেজা সাগর, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সংগঠক শান্তুনু মিত্র, উদীচী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতীম মহাজন।

 

নাগরিক সমাবেশে প্রফেসর ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির প্রাণশক্তি। এ খাতে বিনিয়োগ ভবিষ্যত অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমানের বিনিয়োগ। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প যেমন প্রয়োজন তেমনি আধুনিক উন্নত দেশ গঠন করতে হলে আগে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিনির্মাণ। আর এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরী। বাজেটে সংস্কৃতি খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। সাংস্কৃতিক ভিত্তি রচিত না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম সঠিকভাবে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে পারবে না। তাই সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা শহর এবং উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য সংস্কৃতি খাতে বিনিয়োগ অত্যাবশ্যকীয়।

 

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী কল্পনা লালা বলেন, সংস্কৃতি চর্চা এখন নানা ঘোরটোপে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এরকম প্রতিকূলতার মাঝে সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব নয়। শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রধান। শিল্পীদের মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান রক্ষায় রাষ্ট্রকেই অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে। সংস্কৃতি চর্চাকে বিকশিত করতে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কোনো বিকল্প নেই। একজন শিল্পী যদি শেষ জীবনে অসহায় হয়ে পড়েন তাহলে নতুন প্রজন্ম শিল্প চর্চায় আগ্রহী হবে না।

 

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সাংস্কৃতিক মিলনায়তন অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ বরাদ্দ। অস্বচ্ছল শিল্পীদের মাসিক যে ভাতা দেয়া হয় তা আজকের বাজার মূল্যের বিবেচনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এতে একজন শিল্পীর ওষুধ খরচও চলে না। এই ভাতা কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করতে হবে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বার্ষিক অনুদান বৃদ্ধি করার এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্বমুক্ত সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নানা বাধায় পড়ে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি চর্চার প্রধান দুটি উন্মুক্ত কেন্দ্র ডিসি হিল ও সিআরবিতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন করা যাচ্ছে না। এভাবে বিধি নিষেধ দিয়ে সংস্কৃতি চর্চা হয় না। অবিলম্বে অবশ্যই এই কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত করতে হবে। শুধু মুখে সংস্কৃতির কথা বলে কাজে বিরোধী পরিবেশ বজায় রাখা সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা নয়।

 

সঙ্গীত শিল্পী শ্রেয়সী রায় বলেন, সংস্কৃতি একটি সুকুমার বৃত্তি। আর্থিক যোগান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা না থাকলে সংস্কৃতি চর্চা এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকার যে বিনিয়োগ করবে তার হয়ত আর্থিক ফল লাভ হবে না কিন্তু এর সার্বিক ফলাফল অনেক ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী। শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যদি আর্থিক নিশ্চয়তার অভাবে শিল্প চর্চা করতে না পারে তাহলে সেই স্থান নেবে অপসংস্কৃতি। যার বিভিন্ন লক্ষণ আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি। সংশোধিত বাজেটে অবশ্যই সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

 

সম্মিলিত আবৃত্তি জোট চট্টগ্রামের সভাপতি ও চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, সংস্কৃতি চর্চার অধিকার ও বাজেট বরাদ্দের দাবি কোনো করুণা নয়। এটা দেশের মানুষের অধিকার এবং ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগ। সংস্কৃতির লালন-পালন না হলে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভবপর হবে না। তাই একটি সুন্দর অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবান করার কোনো বিকল্প নেই।