আপডেটের সময়ঃ নভেম্বর ৫, ২০২৩
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আয়োজনে ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক অ্যাজেন্ডা এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তৃণমূল নারী নেতা, কমিউনিটি ফোরাম ও ইয়ুথ দলের সঙ্গে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক অ্যাজেন্ডা এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত।
ওয়ার্কশপে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তার মূল এজেন্ডাগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণে যাতে কমিউনিটির নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং তৃলমূলের নারী-নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদস্থ কর্ণফুলী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালা পরিচালনা করেন বিএনপিএস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহম্মদ ও উন্নয়ন কর্মকর্তা এরশাদুল করিম। কর্মশালায় অংশ নেন শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি নারী নেত্রী, এনজিও কর্মী এবং নারী অধিকার কর্মীরা।
কর্মশালায় নারী শান্তি নিরাপত্তার মূল এজেন্ডা সম্পর্কে ধারণা, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার উদ্দেশ্য কার্যক্রম ও বাস্তবায়ন কাঠামো বর্ণনা এবং নারী শান্তি নিরাপত্তার বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের মতামত ও সহযোগিতা চিহ্নিত করা হয়।
পৃথিবীব্যাপি একটি বড় অংশ জুড়ে যুদ্ধ, দাঙ্গা, দ্বন্দ্ব, উচ্ছেদ, দখলদারী ঘটে চলেছে। সামরিক বাহিনীর যুদ্ধের বাইরেও জাতিগত-গোত্রগত-বিশ^াসগত দ্বন্দ-সংঘাত প্রতিনিয়তই ঘটছে। যার অনিবার্য ফলাফল হিসেবে নারী এবং কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, সামরিক বাহিনীর অত্যাচার, বলপ্রয়োগে দেহব্যবসা, জোরপূর্বক বিবাহ, সন্তানধারনে বলপ্রয়োগ, যৌন-শারীরিক নির্যাতন, ঐতিহ্যের অযুহাতে যৌনাঙ্গ কর্তন, খাদ্য-আশ্রয় এবং নিরাপত্তার বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা ইত্যাদি অহরহ ঘটে চলেছে। অপরপক্ষে, এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ খুবই সামান্য।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের উপায় হিসেবে ২০০০ সালে ৩১ অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ তার ৪২১৩তম অধিবেশনে রেজুলেশন/সিদ্ধান্ত ১৩২৫ গ্রহণ করে। এর পূর্বে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ কর্তৃক যে সব মানদন্ড, সনদ, চুক্তি, সিদ্ধান্ত- গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতাতেই ‘নারী-শান্তি-নিরাপত্তা’ নামের এই রেজুলেশন গৃহিত হয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ’র রেজুলেশন ১৩২৫ (ইউএনএসসিআর ১৩২৫) এবং বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই রেজুলেশনের ধারনা প্রয়োগ করতে (রেজুলেশনকে কার্যকর করতে) করণীয় নিয়ে কর্মশালায় আলোচনা করেন অংশগ্রহণকারীরা। পাশাপাশি এক্ষেত্রে কমিউনিটিতে নিজেদের করণীয় এবং এই রেজুলেশন বাস্তবায়নে তাদের সুপারিশ প্রস্তাব করেন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই পৃথিবীর অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও নারীর প্রতি সহিংসতা যেমন; ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নির্যাতন, বল প্রয়োগ, শারীরিক- মানসিক নির্যাতন প্রবলভাবে বিদ্যমান।
নারীর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনেও ইউএনএসসিআর ১৩২৫ কে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে যার নির্দেশনাও এই রেজুলেশনে খুঁজে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাহল ইউএনএসসিআর ১৩২৫ এর স্থানীয়করণ করা, যা বিশেষ কঠিন কিছু নয় বলে কর্মশালায় মত আসে।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, যুদ্ধাবস্থা বা গোষ্ঠীগত বিবাদ অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ নারীর প্রতি মানবসৃষ্ট ভয়াবহ ঝুঁকিসমূহ নারীর জন্য বিরাট এক দুর্যোগাবস্থাকেই নির্দেশ করে। আমরা সবসময়ই দেখে আসছি যে, যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি নারীদের জন্যে ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এসময়ে বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে বাল্যবিবাহও। করোনাভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ্বের মানুষ যখন শুধু বেঁচে থাকা নিয়ে আতঙ্কিত, এই পরিস্থিতিতেও চলছে নারীর ওপর সীমাহীন নির্যাতন। পাশাপাশি নারীর ওপর গার্হস্থ্য কাজের ভার অনেক বেড়ে যায় এবং করোনাকালে লকডাউন পরিস্থিতিতে আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার মধ্যেও তাকে শিশুসন্তানসহ পরিবারসদস্যদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়।###