আপডেটের সময়ঃ সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের আলোকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নাগরিকেরা। তারা বলেছেন, নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত উদ্যোগ গড়ে তোলা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিকল্প নেই।
আজ রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবদান রাখতে নারী-শান্তি-নিরাপত্তা এজেন্ডা বিষয়ক স্থানীয়করণ কর্মশালা আয়োজন করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)। গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব উইমেন পিসবিল্ডারস (জিএনডব্লিউপি)-এর সহযোগিতায় এ কর্মশালায় অনলাইনে যুক্ত থেকে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন জিএনডব্লিউপি-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জেসমিন নারিও গ্যালাসি, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডভোকেসি সোফিয়া ডিয়ানি গার্সিয়া, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার বিয়ানকা পাবোটয়।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস)-এর পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, নারী সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে দুর্যোগকালীন সময়ে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ দুর্যোগ প্রতিরোধ ও উপশমের যেকোনো উদ্যোগে উপেক্ষিত থাকেন নারীরা।
জিএনডব্লিউপি-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জেসমিন নারিও গ্যালাসি বলেন, জাতিসংঘের ১৩২৫ রেজুলেশন অনুযায়ী বাংলাদেশে জিএনডব্লিউপির সহায়তায় বিএনপিএস নারীর শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। নারীর সমতা রক্ষা, বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, তৃণমূল নারী সংগঠনের বিকাশ এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে নারীর অবদান তুলে ধরতে জিএনডব্লিউপি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের স্থানীয় পর্যায়ে নারীসহ পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানের তিনদিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণটি ডিজাইন করা হয়েছে। চারটি বিষয়ের ওপর এ কর্মশালা। এর মাধ্যমে আমরা শিখব জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে কীভাবে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা কার্যকর করা যায়; কমিউনিটি পর্যায়ে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে নেওয়া হবে, জাতিগত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার উপায়গুলো বের করব কর্মশালায়। আমরা চাইলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে অসমতা, বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা প্রতিরোধ করতে পারি। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা নারীর প্রতি সহিংসতা, কিশোর অপরাধ, মাদক, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কর্মশালা আয়োজনের পটভূমি এবং নারী শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাকে স্থানীয়করণ করার গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপিএসের উপ পরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, এ কর্মশালা হল অনুশীলন। আমরা ১৯টি সেশনের মাধ্যমে তিনদিনব্যাপী এ কর্মশালায় বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত সমন্বয় কীভাবে ঘটাতে হবে সেসব বিষয়ে শিখব। অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৪টি স্টেয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ১ বছর এসব কমিটি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করবে। যা মূলত স্থানীয়করণের মাধ্যমে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবদান রাখবে।
জিএনডব্লিউপি এর বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম অফিসার পাহিমা আহমেদ প্রশিক্ষনার্থীদের কাছে জেন্ডার সমতা, ক্ষমতায়ন, জাতীয় ও স্থানীয় আইন-নীতি এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীদের শান্তি নিরাপত্তার বিষয়ক বিভিন্ন শিখন ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
বিএনপিএসের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলায় কাজ করছে বিএনপিএস। যারা এ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন, তাদের বড় দায়িত্ব হল কীভাবে এ আলোচনা ও পরিকল্পনা স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিবেন। এজন্য সব ধরনের সহায়তা আমরা দেব।
তিনদিনব্যাপী এ কর্মশালার উদ্বোধন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনজিও সেল) আফরিন ফারজানা পিংকি বলেন, নারীরা যাতে সবক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে সে বিষয়ে সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। চট্টগ্রামের বর্তমান জেলা প্রশাসক একজন নারী। প্রত্যেক স্তরে যাতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয় এজন্য সকল উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। বর্তমান বেশিরভাগ এনজিওগুলোর দায়িত্বে নারী। জেলা ও উপজেলায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করতে পারলে তারা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। সব রকমের সহায়তা আমরা দিব। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারী, শান্তি নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এজন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
কর্মশালার প্রথম দিনে জেন্ডার ধারণা, নারী শান্তি নিরাপত্তা বাস্তবায়ন, সংঘাত ও প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ এবং ইউএনএসসিআর-১৩২৫ রেজ্যুলেশন বিষয়ক পলিসি নিয়ে আলোচনা হয়।
এসব বাস্তবায়নে সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও নাগরিক সমাজের ভূমিকাসহ অন্যান্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন বিএনপিএস ও জিএনডব্লিউপি-এর প্রশিক্ষকেরা। অংশগ্রহণকারীদের অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে কর্মশালার প্রথম দিনের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।স্থানীয়করণের এ কর্মশালায় চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক এবং নারী অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।# বিজ্ঞপ্তি